খাগড়াছড়ির সাজেকে একদিন


অল্প সময়ের জন্যে যাচ্ছি প্রথমবারের মতো …. একটু ভাবনা ছিলো সিডিউল মতো ঠিকঠাক সব ঘোরা হবে কিনা। সাথে ৫ বছরের মেয়েটা যাচ্ছে তাই খাবার নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে আনন্দটা ছিলো অবশেষে যাচ্ছি বন পাহাড়েরর দেশে।

পান্থপথ/ কলাবাগান বাসকাউন্টার থেকে বাস ছাড়ে বেশ কয়েকটা সময়ে। তবে সময় বাঁচাতে রাতের জার্নিই উপযুক্ত। আমরা বাসে উঠলাম ১০টায়। বাস ছাড়ল সাড়ে ১০ টায়। ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে পৌছে গেলাম খাগড়াছড়ি বাসস্ট্যান্ডে । যাওয়ার পথ শেষ টুকুতে পাহাড়ে বাঁকে বাসের একেবেকে যাওয়া কিছুটা ভীতু বানিয়ে দিচ্ছিল আমায়। তবে বাস থেকে নামতেই পাহাড়ের ঠান্ডা বাতাস মনজুড়িয়ে দিলো।

কাছের একটা গেস্ট হাউজে আধাঘণ্টা রেস্ট নিয়ে খাগড়াছড়ির বিখ্যাত মনটানা রেস্টুরেন্টে নাশতা সারলাম । এরপর দলবেধে জিপে করে রওনা সাজেকের পথে। যাচ্ছি তো যাচ্ছি পথ যেনো শেষ হয়না। থামলো হঠাৎ তবে তা সাে কে নয় দীঘিনালায় আর্মি অনুমতির জন্যে যাত্রাবিরতি। ডাব খেয়ে আশপাশ ঘুরে ফিরে দেখছিলাম। কাছেই আছে স্বচ্ছ পানির পাহাড়ী লেক। আদিবাসীদের গ্রাম আর উচু নিচু পাহাড়।
ভ্রমনের অন্যতম চমক ছিলো সাজেকের রাস্তা। যেমন উচু , তেমনি নিচু  যেনো বিধাতার সৃষ্টি চাঞ্চল্যকর এক রাইড ।  উঠা নামার সময় চোখ বন্ধ করে কখনো কখনো দোয়া পড়ছিলাম আমি। বেশিক্ষণ চোখ বন্ধও রাখরেত পারছিলাম না, কারন পাশেই এমন সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যা না দেখলে আফসোস থেকে যেতো। উচুর পাহাড়ে পাহাড়ীদের ঘর, ছোট্ট ছোট্ট শিশু, কিছুক্ষন পর পর ছড়ায় পানি বয়ে যাওয়ার অপরূপ সৌন্দর্য।

খাগড়াছড়ি সদর থেকে সকাল ৯টায় রওনা হলে সাজেকে পৌছে যাবেন দুপুর নগাদ। সাজেক মূলত পাহাড়ের উচুতে সাজানো গোছানো অনন্য সুন্দর এক ট্যুরিস্ট স্পট। ঢুকতেই চোখে পড়বে বাগানবিলাসের ঝোপঝাড় ঢাকা ছোট-বড় হোটেল -মোটেল আর কাঠের তৈরি কটেজ। আমরা এমনি এক কাঠের কটেছে থেকেছি। পৌছেই গোসল সেরে চলে গেলাম দুপুরের খাবার খেতে। ঝাল করে রান্না করা পাহাড়ী মুরগী, ভাত, সবজি আর ডাল এই মেনু, এর দম বেশ কম। তবে আপনার প্রান মেটাবে পাহাড়ের ছড়া থেকে সংগ্রহ করা খাবার পানি। স্থানীয় হোটেল থেকে যত খুশী খাওয়া যাবে প্রান জুড়িয়ে যাওয়া এই পানি।

খাওয়ার পর রেস্ট নিয়ে চললাম খাগড়াছড়ির সর্বোচ্চ পাহাড় কিংলাক জয়ের পথে। ট্যুরের মধ্যে দিন হিসেবে কয়েকজন মিলে ভাড়া করে নিতে পারেন স্থানীয় পাহাড়ী জিপ। পাহাড়েরর ঝুকিপূর্ণ রাস্তায় এখানকার দক্ষ চালকরাই সবেচয়ে বেশি উপযুক্ত। আমাদের সাথে থাকা এমনি এক জিপে করে পৌছে গেলাম কিংলাকের নিচে। তার পর লাঠিতে ভর করে পাহাড়ে ওঠা। সব ক্লান্তি মুছে গিয়েছিলো সবচেয়ে উচু চূড়াটায় পৌছে। চারপাশে মেঘের রাজ্য। ভীষণ সুন্দর! পাহাড়ের অত ওপরের আছে আদিবাসীদের বাস। আদিবাসী শিশুরা উপহার দিলো টকটকে লালজবা। আমরা ওদের দিলাম চকলেট। ভালোবাসা বিনিময়।

এর পর সূর্যাস্ত দেখলাম হেলিপ্যাডে। অদ্ভুত সুন্দর এক সন্ধ্যা। এমনি সময়ে গ্র“পের অন্যান্য বন্ধুদের সাথে গল্প করা Í কফি খাওয়ার অনূভুতি অন্যরকম।

সেদিনের মত ভ্রমন শেষে কটেজে ফেরা। রাতে ছিলো বারবিকিউ পার্টি। বলে রাখা ভালো সাজেকে দিনে হোটেলগুলোতে অর্ডার বা নিজস্ব ব্যবস্থায় খাবারের বন্দোবস্ত না করা হলে রাতে মেলবেনা খাবার। এখানে কারেন্ট নেই বলে জেনারেটর চলে। চর্জার ব্যাটারি ..সাথে রাখা ভাে লা। এই গেলো সাজেকের কথা, খাগড়াছড়ি সদর আর এর আশপাশে পাবেন, রিসংঝরনা, আলুটিলা গুহা, ঝুলন্ত ব্রিজসহ বেশ কিছু টুরিস্ট স্পট , যেগুলো দু –তিন দিনে আরমসে ঘুরে আসা সম্ভব।

লেখক / উপস্থাপনায়: Afshana Neela,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: June 10, 2018

খাগড়াছড়ির সাজেকে একদিন, সম্পর্কে পর্যটকদের রিভিউ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *