দু’দিনের ভ্রমণবৃত্তান্ত

গুলিয়ালী সী বীচ

১৪-ই মে রাত রাত ৯ টায় কমলাপুর স্টেশনে চলে যাই। ১১০ টাকায় টিকেট কেটে অপেক্ষার মূহুর্তগুলি গুনতে লাগলাম একেবারে শেষ মাথায় গিয়ে। প্ল্যাটফর্ম ২ এ চট্রগাম মেইল ট্রেনটি থামবে। আনুমানিক ১০ টার দিকে ট্রেনের মুখ দেখতে পাই। হুরোহুরি করে চার সীট দখল করি। সীট না পেলে মুশকিল হয়ে যেতো। এক্সট্রা ৫০/১০০ ৳ দিয়ে সীট নিতে হত। কিংবা সারা রাত দাড়িয়ে কাটাতে হত।ট্রেন ১০:৪০ এর দিকে গন্তব্যপথে এগিয় চলতে শুরু করে। সকাল ৬:৪৫ কি ৭:০০ টায় সীতাকুণ্ড পৌঁছি আমরা চারজন। তখন গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল।

প্রথম দিন।
#চন্দ্রনাথ_মন্দির
#গুলিয়ালী_সী_বীচ
#সুপ্তরধারা_ঝর্ণা
#বাঁশবাড়িয়া_সী_বীচ
স্টশনে নেমে ফ্রেশ হয়ে ৭:৪৫ এর দিকে অটো ভাড়া করি জনপ্রতি ১৫ ৳ করে। মাঝ পথে অটো থামিয়ে নাস্তা করে নিই। অটো যখন পাহাড়ের কাছে নামিয়ে দেয় তখন আটটা বাজে এবং বৃষ্টি অবসরে যায়। পাহাড় উঠা শুরু করে দিই। ১০:১৫ তে চন্দ্রনাথ মন্দিরে যেতে সক্ষম হই। উঠার সময় ঝর্ণাটি দেখার পর বাম দিকের রাস্তা দিয়ে উপরে উঠি এবং ডান দিকের রাস্তা দিয়ে নিচে নামি। ফলে কষ্ট অনেকটা লাঘব হয়। সাড়ে এগারটায় পাহাড় থেকে নেমে যাই। গুলিয়াখালী যাওয়ার জন্য সি.এন.জি.ঠিক করি ২৭০৳ দিয়ে। সীতাকুণ্ড বাজারে হোটেল সৌদিয়াতে ১২ টার দিকে দুপুরের খাবার সেরে ফেলি। খাবারের টেস্ট ভালো ছিল। সাড়ে বারোটার সময় গুলিয়াখালী চলে আসি। ৩০০৳ দিয়ে বোট ভাড়া করে সী বীচে চলে যাই। হেটেও বীচে যাওয়া যায়। জোয়াড় চলছিল বিধায় বোটে মজার দোল উপভোগ করছিলাম। আড়াইটার সময় সি.এন.জি.র কাছে চলে যাই। ২০০৳ দিয়ে সি.এন.জি নিয়ে ইকো পার্কের গেটের কাছে চলে আসি। গেট থেকে আরেকটি সি.এন.জি. রিজার্ভ করি ৬০০৳ দিয়ে। প্রথমে সুপ্তধারা ঝর্ণার কাছে নিয়ে যায়। তখন দুপুর সাড়ে তিনটা বাজে। ঝর্ণা দেখতে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যাই। ঝর্ণা দেখে সাড়ে চারটায় উপরে উঠে আসি। এরপর সহস্রধারা ঝর্ণার সিড়ির কাছে চলে যাই। শরীরে এনার্জির ঘাটতি থাকায় ঝর্ণা দেখতে যাইনি। কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে বাঁশবাড়িয়া সী বীচে চলে যাই। অবশ্য এর জন্য সি.এন.জি. ড্রাইভারকে এক্সট্রা ২৩০৳ দিতে হয়। সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে সন্ধ্যার পরে জনপ্রতি ২০৳ করে সি এন জি-তে উঠি। মেইন রোডে নামিয়ে দেয়। মেইন রোড থেকে সি এন জি ২০৳ দিয়ে ভাড়া করে সীতাকুণ্ড বাজারে নামি। হোটেল সৌদিয়াতে ১০০০৳ দিয়ে চার বেডের একটি রুম ভাড়া করি। আপন রেস্তোরাতে রাতের খাবার খাই। খাবার এবং সার্ভিসিং মোটামুটি ভালোই।

দ্বিতীয় দিন।
#খৈয়াছরা_ঝর্ণা
সকালে শরীরের কন্ডিশন খুবই নাজুক অবস্থায় ছিল। সাড়ে ছয়টা থেকে ডাকা শুরু করি, কিন্তু সবার ঘুম ভাঙ্গাতে ভাঙ্গাতে আট টা বেজে যায়। ফ্রেশ হয়ে হোটেলে নাস্তা খেতে শুরু করি, অমনি মুষলধারে বৃষ্টি নামা ধরে। বৃষ্টি কমতে কমতে সাড়ে নয়টা বেজে যায়। হালকা বৃষ্টিকে হেলা করে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ি। ব্রীজের উপর থেকে বাসে উঠি জনপ্রতি ২০৳ করে। খৈয়াছড়ার মোড়ে নামতে হবে। বরতাকিয়া বাজারে নামলে ১০ মিনিট হাটতে হয়। মোড়ে সি.এন.জি. দাড়িয়ে থাকে। ১০০৳ রিজার্ভ করে গেলে ঝর্ণার ট্রেইলে নামিয়ে দেয়। প্রাসঙ্গিক কিছু কারনে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। সেখান থেকে আমরা ১১:৩০ এর দিকে হাটা শুরু করি। ১২:২০ এর দিকে ঝর্ণার প্রথম ধাপে চলে যাই। অন্যান্য ধাপগুলো দেখার জন্য হিম্মত যুগিয়ে উপরে উঠা শুরু করি। প্রায় ১:০০ টার দিকে ষষ্ঠ ধাপে উঠতে সক্ষম হই। সপ্তম ধাপে উঠা খুবই বিপদসংকুল মনে হল। উঠার পথ বের করতে পারলেও পথটি খুব রিস্কি ছিল। তাই সামনে আর পা বাড়াই নি। প্রায় সোয়া একটার দিকে নিচে নামতে শুরু করি। আধা ঘন্টা সময় লাগে নামতে। ঘন্টা-খানিক লাফা-লাফি, দাফা-দাফি ও গোসল করি। তারপর সি.এন.জি. স্টেশনে এসে খাওয়া- দাওয়া সেরে নিই। ঝর্ণায় যাওয়ার আগে অর্ডার করে গেলে পছন্দের খাবার রেঁধে দিবে। তারপর সীতাকুণ্ড বাজারে চলে আসি। বাজেট কম থাকায় #মহামায়া_লেক যাওয়া হয় নি। তবে #খৈয়াছড়া ট্রেকিং এর পরও মহামায়া লেক ঘোরার মত পর্যাপ্ত সময় আমাদের হাতে ছিল।
আমাদের জনপ্রতি মোট খরচ হয় প্রায় ২,৫০০ টাকা।

বি: দ্র: প্রকৃতি ও পরিবেশ একটি অপরটিরসাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে, পরিবেশ সুন্দর এবং দূষণমুক্ত রাখতে হবে। পরিবেশ নোংরা করা যাবে না, যেথায়-সেথায় ব্যবহার্য্য বস্তু ফেলা যাবে না।

লিখেছেন – Habibur Rahman Ashique

লেখক / উপস্থাপনায়: Suzon Khan,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: June 10, 2018

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *